মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন
(জামান মৃধা নীলফামারি জেলা প্রতিনিধি)
করোনার ভয় কে জয় করে বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের যুগোপযোগী কৃষি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা এবং তার বাস্তবায়ন,সার,কীটনাশক ও আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ কৃষি ক্ষেত্রে এর ব্যবহার তৎসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, কৃষিবিদ মোঃ সেকেন্দার আলীর সার্বিক সহযোগিতা,পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে কৃষিক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ধান,পাট,ভুট্টা,সরিষা,সূর্যমখী,পেঁয়াজ সহ কৃষির সর্বক্ষেত্রে।
সাধারণত প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে ১.৫০ মেট্রিক টন সূর্যমুখীর তেলবীজ উৎপাদিত হয়। বর্তমানে প্রতি কেজি তেল বীজের দাম ৬০-৭০ টাকা। তাতে এক হেক্টর জমিতে ১লক্ষ ১৫ হাজার টাকার তেল বীজ উৎপাদিত হবে। সে হিসেবে এবার ডিমলা উপজেলায় প্রায় ৫৮ লক্ষ টাকার সূর্যমুখীর তেলবীজ বিক্রির আশা করছেন কৃষকেরা। এরই ধারাবাহিকতায় এবছর প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে ”সূর্যমুখী ফসলের চাষ” করা হয়। সরকারি সার্বিক সহযোগিতা ও প্রকৃতি অনুকূলে থাকায়, এবার নীলফামারির,ডিমলা উপজেলায় সূর্যমুখী ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে। মাঠ ময় মাঠ সূর্যমুখীর বাগানে ফুঁটেছে ফুল। সূর্যমূখী ফুলের এমন মনমুগ্ধকর অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে বিপুল সংখ্যক প্রকৃতি প্রেমীরা ছুটে আসছেন পরিবার পরিজন সহ বন্ধুবান্ধব কে নিয়ে।
এবছর ডিমলা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ৪৮.৬৫ হেক্টর জমিতে আরডিএস ২৭৫ জাতের সূর্যমুখীর চাষ শুরু করেছেন কৃষকরা। এবার প্রথমবারের মতো কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের রাজস্ব ও প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় স্থানীয় ৩৬৫ জন কৃষকের মাঝে সূর্যমুখী ফুলের বীজ ও সার দেয়া হয়েছে বিনামূল্যে। চাষিরা গত ১ ডিসেম্বর বীজ রোপন করেন। এরপর তিন মাসের মধ্যে প্রতিটি গাছে ফুল ফোঁটার পর বাগানগুলো অপরূপ সৌন্দর্য্যের রূপসী রূপ ধারন করেছে। অপূর্ব সুন্দর ও মনমুগ্ধ কর এই দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন প্রকৃতি প্রেমিরা তাদের পরিবার পরিজন ও বন্ধু বান্ধব নিয়ে ছুটে আসছেন বাগানের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
বাগান দেখতে আসা প্রকৃতি প্রেমিকর রিপন ইসলাম বলেন, এই এলাকায় সূর্যমুখী ফসলের চাষের খবরটি ফেইসবুকে দেখেছি ও বন্ধু বান্ধবের মুখে শুনে আজ পরিবার সহ দেখতে এসেছি। এখানে এসে খুবই ভালো লাগছে। প্রকৃতির এত রূপ না এলে বুঝাই যেত না।
সূর্যমুখী ফসলের মালিক কৃষক চিত্তরঞ্জন রায় জানান, ডিমলা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের অনুপ্রেরণা থেকেই এই অঞ্চলে সূর্যমুখী ফসলের চাষ শুরু করেছি।
জানা যায়, সরকারি ভাবে কৃষকদের মাঝে সূর্যমুখী ফসলের বীজ, সার ও প্রয়োজনীয় কীটনাশক দিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ফলন ভালো হওয়ার প্রত্যাশা করছি। ফলনের ন্যায্য মূল্য পেলে আমাদের পরিশ্রম স্বার্থক হবে এবং আমাদের মতো আরো অনেক কৃষক সূর্যমুখী চাষে আরো উৎসাহিত হবে এবং এতে বহুলাংশে দেশে বেকার সমস্যার সমাধান হবে।
সূর্যমুখী ফুলের তেল স্বাস্থ্য সম্মত ও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ব্যাপক উপকারিতার কথা জানিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ সেকেন্দার আলী বলেন, ডিমলা উপজেলায় এই প্রথম সূর্যমুখী ফসলের চাষ করার লক্ষে কৃষককে বীজ, সার ও কীটনাশক সহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং আমি নিজে মনিটরিং করছি প্রত্যেকটি সূর্যমুখীর বাগান। এবার এ উপজেলায় কৃষকরা ৪৮.৬৫ হেক্টর জমিতে বীজ বপন করেছেন সূর্যমুখীর। আশা করা যাচ্ছে, কৃষকরা ফলনও ভালো পাবেন । এই ধরনের কর্মসুচী সফল হলে আগামী বছর আরো ব্যাপক আকারে সূর্যমুখী ফসলের চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হবে এবং কৃষকরা যেন ন্যায্য মূল্য পায় সে দিকটি নিশ্চিত করা হবে।
তিনি আরো বলেন, দেশের সাধারণ জনগণের তেলের চাহিদা পুরনে ”সূর্যমুখী চাষ” তেল জাতীয় ফসল হিসেবে নতুন মাত্রা বহন করবে এবং কৃষি মন্ত্রনালয় তথা সরকারের উদ্দেশ্য সফলতা পাবে এবং আগামীতে সূর্যমুখী ফসলের উৎপাদন বাড়িয়ে সরকারি ভাবে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।
ডিমলা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার, কনক চন্দ্র রায় বলেন, সূর্যমুখী ফসলের চাষ পরিবেশ বান্ধব যা আমাদের পরিবেশের জন্য যথেষ্ট উপকারী সঠিক পরামর্শ প্রদানে আমরা সর্বদায় প্রস্তুত আছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজস্ব ও প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় সূর্যমুখীর চাষাবাদ সম্প্রসারণে এ মাঠ দিবসের আয়োজন করে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নানা কারণে দেশে আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। সে জন্য দেশের চর ও হাওর এলাকায় প্রণোদনা মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণের কাজ করা হচ্ছে। আগামী আউশ ও আমন মৌসুমীও প্রণোদনা দেওয়া হবে কৃষিক্ষেত্রে।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।